ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এমন উত্তেজনার মধ্যেই সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) সংলগ্ন এলাকায় পূর্ণমাত্রার সামরিক মহড়া চালিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।
নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার এই সামরিক মহড়ায় গোলাবর্ষণের অনুশীলনসহ যুদ্ধপ্রস্তুতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ‘শত্রুপক্ষের সম্ভাব্য আগ্রাসনের জবাবে সশস্ত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে সেনাবাহিনী প্রস্তুত- এমন একটি বার্তা দিতে চেয়েছে ইসলামাবাদ।’
এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তা এবং সৈন্যরা এ মহড়ায় অংশ নেন। বাহিনীর হাতে থাকা উন্নত যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৌশলগত দক্ষতা প্রদর্শন করা হয় সেখানে।
এর আগের দিন বুধবার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতীয় বাহিনীর ‘উসকানিমূলক’ গুলির জবাবে কিয়ানি ও ম্যান্ডাল সেক্টরে একটি ভারতীয় চৌকি ধ্বংস করে দিয়েছে তারা।
গোয়েন্দা সূত্রের ভিত্তিতে বুধবার ইসলামাবাদ দাবি করে, ভারত আগামী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিজেদের আকাশসীমার নিরাপত্তা ও বিমানবন্দরগুলোয় সতর্কতা জারি করেছে দেশটি। এরই মধ্যে পাকিস্তানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করেছে ভারত।
চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও চীন দুই পক্ষকে শান্ত থাকতে বলেছে। এনডিটিভি অনলাইন জানায়, গতকাল বুধবারও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন মোদি। পেহেলগামে হামলার পর এটি কেবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটির (সিসিএস) দ্বিতীয় বৈঠক। প্রথম বৈঠকে সিন্ধুর পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
এদিকে ভারতের সম্ভাব্য হামলা নিয়ে নিরাপত্তা উদ্বেগের মধ্যে নিজেদের আকাশসীমায় নজরদারি জোরদার করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) দেশটির আকাশসীমা দিয়ে চলাচলকারী দেশি-বিদেশি সব ফ্লাইট চলাচলের ওপর নজরদারি চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে। বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইটগুলো বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিমানবন্দরগুলোতেও বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, সন্দেহজনক যেকোনো উড়োজাহাজের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কোনো ফ্লাইট নিয়ে সন্দেহ হলে উচ্চপর্যায়ের অনুমোদন ছাড়া ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হবে না। নিরাপত্তার কারণে বুধবার পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের গিলগিট ও স্কারদু শহরের নির্ধারিত সব বাণিজ্যিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, সতর্কতা হিসেবে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ার কারণে নিজেদের আকাশসীমা সুরক্ষিত রাখতেই পাকিস্তান এসব পদক্ষেপ নিয়েছে।
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেলেহগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ বেসামরিক মানুষ নিহত হন। ভারতের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করা হলেও কোনো ধরনের প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। অন্যদিকে পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। এরই মধ্যে দুই দেশ পাল্টাপাল্টি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে আরো একটি যুদ্ধ লাগার শঙ্কা তৈরি হওয়ায় পুরো ভারতীয় উপমহাদেশ অস্বস্তিতে পড়েছে।
খুলনা গেজেট/এইচ